আমি প্রাণপন চেষ্টা করছি, আমার চোখে যেন পানি না আসে। বৃষ্টি নামের সার্থকতা বজায় রাখার জন্য হুটহাট চোখে বর্ষন ঘটানো আমার ভীষন অপছন্দের একটা কাজ। তাছাড়া এত তুচ্ছ ব্যপারে বসে বসে কান্না করার মত বাড়তি সময়ও আমার নেই। কিন্তু একটু আগে যে ঘটনাটা ঘটলো সেটা মনে করেই আমার গা রি রি করছে। মামী সুযোগ পেলেই আমাকে এভাবে অপমান করে। মাঝে মাঝে মনে হয় এখানে না থেকে কারো বাসায় কাজটাজ করে খাই। এমনিতেও এ বাসায় আমি বুয়া ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু আমার সব ইচ্ছার মত এই ইচ্ছাটাও আমি বুকে চেঁপে রাখি। এটা অবশ্য ভয়ংকর ধরনের ইচ্ছা, তবে আমার অনেক নিরীহ ইচ্ছাও আমাকে বুকে চেঁপে রাখতে হয়।
যেমন একটু আগে মামীকে কয়েকটা কঠিন কথা শোনাতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু ইচ্ছেটা চেঁপে যেতে হয়েছে। নীচে বসার ঘরে রবিন ভাইয়ের বন্ধুরা এসেছে। মামী আমাকে ওদের চা বানিয়ে দিতে বললো। চা বানাতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু সমস্যা হলো সেই চা নিয়ে আমাকেই নীচে যেতে হবে। আর এই ব্যপারটায় আমার অনেক আপত্তি আছে।
ছেলেগুলোকে ঠিক মানুষের পর্যায়ে ফেলা যায়না। এদের দেখলেই আমার পেট মোটা কুৎসিত মাকড়শার কথা মনে হয়। মাকড়শা যেমন জাল বুনে শিকারের জালে আটকা পড়ার অপেক্ষায় থাকে, এরাও তেমনি অপেক্ষায় থাকে। পার্থক্য হলো এরা শুধু মানুষ শিকার করে, তাদের নোংরা কুতকুতে চোখগুলো দিয়ে।
আমি মামীকে শুধু বললাম, আমি যাবোনা। তার উত্তরে মামী যে ক’টা বাক্য বলেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র্র বাক্যটা হল, “আমার শরীর দেখে এদের মধ্যে কেউ যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয় তাহলে শুধু আমার বাবা মাই না, আমার মামা মামীও বেঁচে যান।” এই কথার পর আর কোন কথা থাকতে পারেনা, তাই আমি বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে ওদের চা দিয়ে এলাম। আর সাথে করে কিছু কুৎসিত মন্তব্য নিয়ে ফেরত এলাম।
দুবছর আগেও যদি কেউ আমাকে এসব মন্তব্য করতো, আমি লজ্জ্বায় অভিমানে মারা পড়তাম। অথচ এখন দিব্যি আমি রাতের খাবারের জন্য রান্না চাপাচ্ছি। এসব কথা আজকাল সয়ে যায়। নইলে দুবছর আগে আমিই কি কখনো ভেবেছিলাম মামী এভাবে কথা বলতে পারে !!!!
মামীর পুরোনো দিনের আচরনের কথা মনে করে বোধহয় একটু জোরেই হেসে উঠেছিলাম। মামী ধমকে বলে উঠলো
- কিরে, কোন পেয়ারের মানুষের কথা মনে পড়লো এখন? হাসতে হাসতে পাতিলের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিস?
আমি কথার জবাব না দিয়ে ওই দিন গুলোর স্মৃতি ভাবতে লাগলাম…..
২.
আমার গ্রামের কথা মনে হলেই আমার সবার আগে মনে পড়ে জল টলটল করা দীঘি টার কথা। বিশাল একটা তীর ছাড়ানো দীঘি, বুক ভর্তি পদ্ম নিয়ে একা বসে আছে। দীঘির জল মায়ের খোলা চুলের মত কালো। আকাশ ছাঁড়িয়ে যাবার নেশায় আকাশি গাছগুলো পাঁড় জুড়ে দাড়িয়ে থাকে। মাঝ দুপুরে দীঘির মাঝে ওদের ছায়া পড়ে। হঠাৎ করে দীঘির রং হয়ে যায় সবুজ। বুকে কাঁপন তুলে সবুজ জলে সূর্য রৌদ্র ছায়ায় লুকো্চুরি খেলে……..
কিংবা, গ্রামের শেষ সীমানার জট ধরা অশ্বথ গাছটা… ডাল পাতার ফাঁকে ফাঁকে পাখির বাসাগুলো….বর্ষার সময়টায় যখন চারদিক ভেসে যেত, আমরা সবাই মিলে এই গাছটার কাছাকাছি চলে আসতাম বৃষ্টির টুপটাপ গান শোনার জন্য। সন্ধ্যার মায়া আলো আর বৃষ্টির রিনিঝিনি মিলে কেমন যেন একটা সুর তৈরী হতো… সেই সুর বুকে লাগলেই মনটা পালাই পালাই করতো। অকারন কান্না জমা হতো বুকে….
এই করে করেই বেড়ে উঠেছি আমি। মা, বাবা আর আমি, পরিবারের সদস্য সংখ্যা মাত্র তিন। বাড়িটা প্রায় খালিই পড়ে থাকতো, শুধু ছুটিছাটায় যখন মামারা বেড়াতে আসতো, তখন আমাদের কিচিরমিচিরে বাড়ি ভরে উঠতো। আমিও অপেক্ষায় থাকতাম ওই সময়টার জন্য। তিতলীর স্কুল ছুটি হলেই ওরা চলে আসতো।
তিতলী আমার মামাতো বোন। ও আমার তিন বছরের ছোট। হলে কি হবে, বরাবরই ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তিতলীর সাথে খেলার, আর মামীর আনা বই এর জন্য অপেক্ষা করতাম। মামী প্রতিবার আমার জন্য নতুন বই নিয়ে যেত… ওরা আসার আগের রাতে উত্তেজনায় আমি ঘুমুতে পারতাম না। আমি বোধহয় খুব লোভী ধরনের ছিলাম। বই পাওয়ার সাথে সাথে দৌড়ে দীঘির ঘাটে চলে যেতাম। এক নিঃশ্বাসে পুরো বই শেষ করে বুক ভর্তি আনন্দ কিংবা বিষাদ নিয়ে বাড়ি ফিরতাম।
তারপর বাকী দিন গুলোয় আমি আর তিতলী খুলে বসতাম আড্ডার ঝাঁপি…. বছরের এই কটা দিন আমার কাছে ঈদের মতো ছিল। মাও আর সন্ধ্যা হতেই পড়ার জন্য বকাবকি করতো না। মা আর মামী মিলে গুজগুজ করতো সারাদিন…. মামী আর মা বন্ধু ছিল আমার আর তিতলীর মতো…..
রাতে খাওয়ার পর বাবা পুরোনো দিনের গল্প শোনাতেন। নানা মারা যাবার পর থেকে মামাকে বাবা কিভাবে বাবার আদর দিয়ে মানুষ করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছেন সেই গল্প…. কি মজারই না ছিল দিনগুলো….
কিন্তু একটা সময় কি করে যেন সব বদলে গেল… বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলেন… আমি তখন সবে এসএসসি দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করছি। মা অস্থির হয়ে পড়লেন। বেশ কিছু জমি বেঁচে দিতে হলো… কিন্তু বাবা আর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন না। একটা সময় অবাক হয়ে দেখলাম, অনেক ভালো রেজাল্ট হওয়ার পরও মা কেন যেন কলেজে ভর্তি করতে চাইছেন না…
খুব অভিমান হয়েছিলো সেদিন… চোখের পানি লুকোতে এক ছুটে পদ্ম দীঘির পাড়ে চলে গিয়েছিলাম…. দীঘির পাশের ছোট্ট শিউলি গাছটা আমার বন্ধু… কিন্তু সেদিন বোদহয় আমার কষ্ট দিন ছিলো… আমার বন্ধু বাতাসের সাথে কানাকানিতে মগ্ন হয়ে ছিলো… ঐ গাছটার নীচে ক্লান্ত হয়ে বসেছিলাম আমি.. মনে হচ্ছিলো যেন অনন্তকাল কাটিয়ে ফেলেছি… কখন যে দিনের শেষ মায়া আলো মিলিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে টেরই পাইনি…. মা যখন খুঁজতে এসেছে, আমাকে ঘিরে তখন লক্ষ জোনাক আলো… সেদিননই প্রথম বুঝেছিলাম, না পাওয়ার কষ্ট বুকের কোথায় লাগে…
মামার বোধহয় আমার কষ্ট দেখে খুব মায়া হচ্ছিলো। তাই সাথে করে এখানে নিয়ে এসেছে। গত দুবছর আমি এখানে… মামীর ফুটফরমাস খাটি, আর সময় পেলে লেখাপড়া করি……
৩.
আমি আর তিতলী এক বিছানায় থাকি। মেয়েটা চুড়ান্ত বাচাল হয়েছে। রোজ রাতে ঘুমুতে এলেই সে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসবে। সারাদিন স্কুলে কি কি হয়েছে তার সবটা আমাকে না শোনানো পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই। আর আমাকেও অবশ্যই প্রতিটা সমস্যার কথা শুনে তার সমাধান দিতে হবে।ওর হাত থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই…..
- বৃষ্টিপু, আজ তোমার কি হয়েছে রে? সেই সন্ধ্যা থেকে দেখছি কোথাও ডুবে আছো…
- তিতলী, তোকে একটা কবিতা শোনাই, শুনবি?
- তোমার নির্ঘাত আজ কিছু হয়েছে…. রোজ এত বলি শোনাও না। আজ নিজ থেকে কবিতা শোনাতে চাইছো!!
- একদি চাঁদ উঠবে না, সকাল দুপুরগুলো
মৃতচিহ্নে স্থির হয়ে রবে;
একদিন অন্ধকার সারা বেলা প্রিয় বন্ধু হবে,
একদিন সারাদিন সূর্য উঠবে না।
একদি চুল কাটতে যাব না সেলুনে
একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো।
একদিন কালো চুলগুলো খ’সে যাবে,
কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না।
একদিন জনসংখ্যা কম হবে এ শহরে,
ট্রেনের টিকিট কেটে
একটি মানুষ কাশবনে গ্রামে ফিরবে না।
একদিন পরাজিত হবো।
একদিন কোথাও যাব না, শূন্যস্থানে তুমি
কিম্বা অন্য কেউ বসে থেকে বাড়াবে বয়স।
একদিন তোমাকে শাসন করা অসম্ভব ভেবে
পূর্ণিমার রাত্রে মরে যাব।" (পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু, নির্মলেন্দু গুণ)
- ঘুম যা আপুমনি…. আজ আমার জেগে থাকার রাত…..
৪.
আমার এইচএসসির রেজাল্ট দিয়েছে। ফলাফল বেশ ভালো হয়েছে। এতটা ভালো হবে তা আমি নিজেও ভাবিনি। আমার রেজাল্টে সবচেয়ে বেশি ঘাবড়ে গেছে মামী। আমি যে এমন রেজাল্ট করবো তা উনি বুঝতে পারেন নি। তারপর অবশ্য সবাইকে ফলাও করে বলে এবং বুঝিয়ে বেড়াচ্ছেন, সবই তার কৃতিত্ব। এই সব কিছুর মধ্যে একটাই ভালো জিনিস হয়েছে। আমার মাকে আমি বহুদিন পর দেখতে পেয়েছি। আমি যখন মাকে জড়িয়ে ধরলাম, আমার এত্ত কান্না পেলো, বলার মত না। আমি মায়ের বুকের ভেতরে ঢুকে হু হু করে কাদছিলাম। কষ্টে আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছিলো। মা অবশ্য কিছু টের পান নি। ভেবেছেন, রেজাল্টের আনন্দে হয়ত কাদছি। আমার তাতে ভালোই হয়েছে। আমি কিছুতেই চাইনা, মা আমার কষ্টগুলো বুঝে ফেলুক। আমার মা হাসলেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমি খুব চাইছিলাম, মা আরো কয়েকটা দিন থাক। কিন্তু মায়ের সে উপায় কোথায়?
দুটো দিন কাটিয়েই মা গ্রামে চলে গেলো। আমি রয়ে গেলাম এই বন্দী নগরীতে। তবে একটা পরিবর্তন আমার জীবনে অবশ্যই ঘটেছে এ কদিনে। আমি কিভাবে কিভাবে করে যেন ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম। এখন দিনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় আমার বাড়ির বাহিরে কাটে। দু একটা বন্ধু বান্ধব আমারও হয়ে গেলো। মামীর কুৎসিত শব্দগুলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাকে স্পর্শ করে না। আমি প্রজাপতি হয়ে থাকি আমার নিজের ভুবনে।
ক্লাসরুম, স্যার ম্যাডামগুলো, ডিপার্টমেন্ট চত্বর এমনকি ফুল বিক্রী করে যে পিচ্চিটা, সেও আমার আপন হয়ে গেলো। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে সকাল না হতেই কিচিমিচি শব্দে চারিদিক ভরিয়ে তোলে। সবার গল্প আলাদা। সবার চাওয়া পাওয়া আশা নিরাশার কাহিনী পৃথক। তাদের সবার আড়ালে আমি নিজের মত নিজেকে নিয়ে মেতে থাকি। নিজের জন্য কিছু একান্ত সময় খুঁজে পাওয়াটাও তো ভাগ্যের ব্যাপার।
আমার সামর্থ্য থাকলে আমি হোস্টেলে উঠে যেতাম। কিন্তু মামী তার বিনে পয়সার কাজের মেয়েটাকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তাতে কি? আমি ভালো আছি, ভিষণ ভালো।
৫.
আজ ভার্সিটি বন্ধ। কি যেন একটা ঝামেলা হওয়ায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেছে কতৃপক্ষ। টুকটাক কাজ শেষে রুমে বসে আছি কখন থেকে। তিতলীর কোন বান্ধবীর জন্মদিন, মামীকে নিয়ে সে গেছে জন্মদিনের উৎসবে। মামী থাকলে এখন বসে থাকা যেতো না, কিছু না কিছু কাজে লেগেই থাকতে হতো। কিন্তু এখন এভাবে চুপচাপ বসে থাকতেও বিরক্ত লাগছে। আমাকে আরো বিপদে ফেলতেই কি না কে জানে, রবিন ভাই তার বন্ধুগুলোকে নিয়ে হাজির হয়েছে।
দরজা খুলতেই তীব্র ঝাঁজালো একটা গন্ধ নাকে বাড়ি খেলো। সব ক’টা মদ গিলে এসেছে। চোখমুখ লাল করে রবিন ভাই আমাকে চা বানানোর জন্য বললেন। আমি এই প্রথম মামীর অভাব অনুভব করলাম তীব্রভাবে।
কতগুলো চেনা অচেনা ছায়া আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি ভাসলাম, ডুবলাম। কখনো পাথরের মত ভারী, কখনো তুলার মত হালকা হলাম। মনে হলো মা আমাকে ফিসফিসিয়ে ডাকছে। আমি চেঁচিয়ে মায়ের ডাকের জবাব দিলাম “মা”…
ডাকতেই থাকলাম, মা আমার শব্দ শুনতে পেলো না। নতুন কোন শব্দে আমার ডাক চাপা পড়ে গেলো। হিসহিস শব্দ, পিশাচের হুংকার, হায়েনার চিৎকার। আমার গলা চেপে ধরলো কেউ। ঠোট চেপে ধরে থামিয়ে দিলো চিৎকার। মনে হলো আমার সারা গায়ের উপর দিয়ে কিছু সাপ কিলবিল করছে। প্রতিটা রক্তকণা বিদ্রোহ করছে আমার সাথে। আগুন লেগে গেছে সারা গায়ে। অসহ্য ব্যাথায় আমি লাল নীল হলাম। আমি কাঁদলাম, চেচালাম, প্রত্যেকের পা ধরে মিনতি করলাম, কিন্তু পিশাচগুলোর কাছে আমার কান্নার কোন দাম নেই। এই সীমাহীন যন্ত্রণার বুঝি কোন সমাপ্তি নেই। একটা সময় আমার নিজের গলার স্বর আর আমার কানে পৌছুলো না। অনুভূতিগুলো ঝাপসা হতে হতে হারিয়ে গেলো।
আমি ডুবে যেতে লাগলাম শুন্যে কোথাও। আমার মাকে দেখলাম। হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। ছুট লাগালাম মার দিকে। পদ্ম দিঘীটা বুক ভর্তি পদ্ম নিয়ে আমাকে এগিয়ে নিতে এলো। শিউলী গাছটার তলে লক্ষ তারার চাদরের নীচে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। কানের কাছে পৈচাশিক কিছু হাসি আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে যেতে এক সময় বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দে পরিনত হলো। আমি ভিজতে লাগলাম অবিরাম বর্ষণে। আহ কি শান্তি......
কিন্তু একটা সময় সেই প্রশান্তিরও সমাপ্তি হলো। সমস্ত শরীরে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে আমি আবারও জেগে উঠলাম। আমার চারপাশ ঘিরে আছে একটা নদী। নদীতে পানির রঙ লাল। লাল নদীর ঠিক মাঝখানে ছিন্নভিন্ন আমি বসে আছি, একা। টিমটিম করে ছোট্ট বাতিটা জ্বলছে। আমার নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টাকে বৃথা করতেই বুঝি তার এই জ্বলে ওঠা।
একবার ভাবলাম হারিয়ে যাই। নিজেকে স্মৃতি করে দিই সবার কাছে। ফের মায়ের কথা মনে পড়লো। মাকে দেখি না কতদিন!! বাবার পাশে শুয়ে ঘুমিয়েছি সেই কবে!! তারপর তিতলীর কথা মনে পড়লো। এসেই তো কবিতা শোনানোর বায়না ধরবে। আমি হারিয়ে গেলে রোজ তার গল্প ঝাঁপির গল্পগুলো শুনবে কে? ফুল বেঁচে যে ছেলেটা, তাকে বই কিনে দেবো বলেছিলাম... না দিয়েই চলে গেলে সে পড়বে কি করে? বেচারার যে খুব ছাত্র হওয়ার সখ...
পিশাচ গুলোর কথা ভাবলাম। এত সহজে তাদের যেতে দিই কি করে? ওদের কিছুই হবে না, তা কি করে হয়!! আমি হারিয়ে যাবো আর ওরা রয়ে যাবে এখানে, এভাবে?? কাল যদি আমার তিতলীর সাথে... থই থই লাল পানিতে পা ফেলে আমি হেঁটে চললাম পাশের ঘরে। অনেক কাজ বাকী এখনো। মাঝে হয়ত ডুকরে কাঁদছিলাম আমি। কিন্তু তাস পেটানোর আর হাসির হল্লার শব্দে শুনতে পায় নি কেউ। আজ আমিও বলবো। আজ আমারও কিছু করার আছে। অসুর বধ করবো বলে পা টেনে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। জলন্ত এক জোড়া চোখ আর ছোট্ট একটা কুড়ুল হাতে……